
প্রকাশিত: Sun, Jan 1, 2023 4:14 PM আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 10:51 AM
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আদলে আমাদের অর্থনীতিতেও নতুন গতির উত্থান দেখতে পাচ্ছি
ভূঁইয়া আশিক রহমান
[২] বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আদলে আমাদের অর্থনীতিতেও নতুন গতির উত্থান আমরা দেখতে পাচ্ছি। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড আশি-নব্বই দশকে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৪০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর যে পথে এগিয়ে তা ৪ হাজার ডলারের ওপর নিয়ে গেছে, এই দশকে বাংলাদেশও সে পথে এগোনোর সম্ভাবনা তৈরি করেছে (বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮০০ ডলার ছাড়িয়েছে)। এ পথে এগিয়ে যেতে পারলে ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু, কালনা সেতু, এসইজেড, এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্পের সরাসরি সুফল ভোগ করবেন এ দেশের প্রায় ৩৩ শতাংশ নাগরিক। পোর্ট হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ৭০ শতাংশ বাড়বে। এতে বন্দরে পণ্য খালাসের সময় অর্ধেকে নেমে আসবে (৪০ দিন থেকে কমে ১৬ দিন হবে)।
[৩] তিনি বলেন, বৃহৎ কানেকটিভিটি প্রকল্পের কারণে এ বছর থেকেই জিডিপিতে অন্তত ১ দশমিক ২ শতাংশ যোগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বোস্টন কনসালট্যান্সি গ্রুপের হালের একটি প্রতিবেদন মতে, প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকলে ২০৩০-এর মধ্যে এ দেশের জিডিপির আকার ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। যদি প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশও হয়, তবুও ২০৪০-এ অর্থনীতি ১ ট্রিলিয়ন ছাড়াবে। ২০২০ সালে মধ্যম ও উচ্চ আয় শ্রেণিতে থাকা নাগরিকের সংখ্যা ১৯ মিলিয়ন। ২০২৫ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হবে ৩৪ মিলিয়ন। উচ্চতর আয় শ্রেণিতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে, তাদের প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্র্যান্ডেড পণ্যের চাহিদা তত বাড়বে। ফলে বাড়ন্ত বাজার হিসেবে বাংলাদেশের সম্ভাবনাও বাড়বে। এর ফলে গত ১০-১২ বছরে যে গতিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে, আগামীতে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হারে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা যায়।
[৪] আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে এমন ইতিবাচক প্রক্ষেপণের ভিত্তি তৈরি হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। এ সময়কালে নতুন ধারার উন্নয়ন চিন্তায় পরিচালিত বাংলাদেশের অর্জনগুলো সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো থেকেই টের পাওয়া যায়। ২০০৮-০৯ থেকে এখন পর্যন্ত বর্তমান মূল্যে জিডিপি সাড়ে চার গুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ের ব্যবধানে বার্ষিক রপ্তানি তিন গুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থবছর শেষে তা ৬০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রবাসী আয়প্রবাহ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এই আয় আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও স্মার্ট অর্থনৈতিক কূটনীতির কোনো বিকল্প নেই।
[৫] ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি মূল্য বেশি হারে বাড়ায় লেনদেনে সাময়িক কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হলেও এই টানাপোড়েন সামলে নেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের যে রয়েছে, তার প্রমাণও মিলছে। অর্থনীতির গতি যেমন বেড়েছে, এটির ঘাতসহতাও বেড়েছে। তার প্রমাণ এতো চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আমাদের সঞ্চয়-জিডিপির অনুপাত ২৫ থেকে ৩১ শতাংশের মধ্যে থাকা। বেশি বেশি সঞ্চয় হয়েছে বলেই চলমান সংকটকালে সেই সঞ্চয় ব্যবহার করে তা মোকাবেলা করা যাচ্ছে। অন্যদিকে নানা রকম চ্যালেঞ্জ থাকার পরও বাংলাদেশে বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। তাই বিনিয়োগ-জিডিপির অনুপাত ২৬ থেকে বেড়ে ৩২ শতাংশ হয়েছে। বাস্তব কারণেই বহিঃস্থ উৎস থেকে ঋণ করতে হয়েছে। তবে টাকার অঙ্কে ঋণের পরিমাণ বাড়লেও জিডিপির শতাংশ হিসাবে মোট বহিঃস্থ ঋণ ২৫ শতাংশ থেকে কমে ২১ শতাংশ হয়েছে। সরকারি বিদেশি ঋণ এখনও জিডিপির ১৫ শতাংশের নিচে। অর্থাৎ অর্থনীতির আকার যে হারে বেড়েছে, বহিঃস্থ ঋণ সেই হারে বাড়েনি। এটি দেশজ অর্থনীতির স্বনির্ভরতার সূচক হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
[৬] বাণিজ্যিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পণ্যের সরবরাহ ও চাহিদা উভয়ের মাঝে সমন্বয়ের চেষ্টা করে যেতে হবে। আমাদের রপ্তানি আরও বাড়াতে যা যা করা দরকার তা করে যেতে হবে। আশার কথা, ইউরোপে আমরা গড়ে ৪৩ শতাংশের বেশি রপ্তানি করেছি গত পাঁচ-ছয় মাসে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, কানাডাসহ অন্যান্য বাজারেও আমাদের বস্ত্র ও অন্যান্য রপ্তানি পণ্য বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়েরবিনিময় হার একই পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করে যেতে হবে। তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বাড়বে। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে ডলারপ্রবাহ যাতে আরও বাড়ে, সেজন্য একক বিনিময় হার ছাড়াও অন্যান্য নিয়ম-নীতি আরও ব্যবসাবান্ধব করার বাস্তব উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে বেশি আয় করেন যেসব প্রবাসী, তাঁরা যেন দেশে দীর্ঘমেয়াদি সরকারি ও অন্যান্য বন্ডে সহজেই ডিজিটালি বিনিয়োগ করতে পারেন, সেদিকে নীতি-মনোযোগ অপরিহার্য।
[৭] এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, করোনাকালের মতোই চলমান বিশ^ অর্থনৈতিক মন্দাকালেও কৃষি আমাদের অর্থনীতির রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে এবং আগামীতেও করবে। তাই কোনো অবস্থাতেই কৃষির প্রতি যে নীতি-মনোযোগ এখন দেওয়া হচ্ছে, তা থেকে সরে আসা যাবে না। এ খাতের জন্য ভর্তুকি (আসলে বিনিয়োগ) অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি কৃষকদের সার্টিফিকেট মামলা ও অন্যান্য হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তাঁদের বাড়তি সমর্থন দেওয়ার নতুন উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অন্যান্য ব্যাংক এবং আধুনিক কৃষকদের সম্মিলিত আলাপের কোনো বিকল্প নেই।
[৮] জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাকে এই সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন সীমিত আয়ের মানুষজন। শুধু রাজস্বনীতি দিয়ে বাড়ন্ত মূল্যস্ফীতির কশাঘাত থেকে ভুক্তভোগী মানুষকে রেহাই দেওয়া যাবে না। তাই মুদ্রানীতির প্রচলিত কৌশল প্রয়োগে দ্বিধা করলে চলবে না। নীতি সুদ বাড়িয়ে বাজারকে উপযুক্ত সিগন্যাল দেওয়ার পাশাপাশি পণ্য সরবরাহ বাড়ানোর যেসব উদ্ভাবনীমূলক উদ্যোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়েছে, সেগুলো অব্যাহত থাকুক। নতুন বছরের শুরুতেই মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির আরও সুসমন্বয় প্রত্যাশা করছি।
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
